ST, SC, OBC দের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হোক

“ST,SC,OBC দের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হোক”
” কম নম্বর নিয়ে কোটায় চাকরি পেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে বলে ব্রিজ ভেঙে গেছে”
“St,Sc রা হচ্ছে সন্ত্রাসি, তাদের তারাও করোনামুক্ত করো “
আরোও কত কি! শুনতে হয়েছে ,আর শুনতে হবেও হয়তো আগামী দিনে এই যদি আপনাদের শিক্ষিত সমাজ হয়ে থাকে, আমিতো হেসে হেসে দেশ ছেড়ে দিতে চাইবো ।
বলছি যে দেশে এখনোও পর্যন্ত কতজন মারা গেছে তার হিসাব রেখেছেন,আদৌ আমরা কোনোদিন রোগমুক্ত পৃথিবীর মুখ দেখতে পাবো কি না তার ক্থা ভেবে দেখেছেন কখনো!??!! পৃথিবী ধ্বংসের পথে আর আপনারা পরে আছেন স্ংরক্ষনের জন্য দেশ টা শেষ হয়ে গেল, কিংবা কোটার মালদের জন্য চাকরি পাচ্ছিনা এইসব নিয়ে । আরে মশাই চাকরি পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করতে হয়, যোগ্যতা লাগে ,এইভাবে জাতিবিদ্বেষ বা দ্বন্দ্ব করলে সময় নষ্ট হবে, চাকরি নয়।
সাংবিধানিক সংরক্ষন হচ্ছে Representation বা প্রতিনিধিত্ব, সেটাকে গতানুগতিক সংরক্ষনের সাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না, ট্রেনে বাসে সিট সংরক্ষন আর সামাজিক প্রতিনিধিত্ব সম্পুর্ন আলাদা বিষয়।
তারপর বলি#সংরক্ষণ কিন্তু কোনও #দয়ারদাননয়, #সংরক্ষন হলো দেশের সামগ্রিক বিকাশের স্বার্থে পিছিয়ে রাখা সমাজের জনসংখ্যার অনুপাতে রাজনীতি, শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে #প্রতিনিধিত্বমূলক_যোগদান। সমাজের জাতিবৈষম্যে দূর করতে বাবাসাহেব আম্বেদকর ভারতের সংবিধানে এই ব্যবস্থা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। কিন্তু এই প্রতিনিধিত্বমূলক যোগদান নিয়েই চারিদিকে আজ বিদ্বেষের আগুন ছড়াচ্ছে জাতিবিদ্বেষীরা, বর্তমানে সারাদেশে এমন এক জাতিবিদ্বেষের বাতাবরন তৈরি হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু ঘৃনা নয়, চলছে অগনিত দলিতনিধন, দলিত নির্যাতন এবং দলিত উৎপীড়ন।
আমাদের দেশে #সংরক্ষনশুধুমাত্রসরকারিক্ষেত্রেরমধ্যেই_সীমাবদ্ধ, বেসরকারি ক্ষেত্রে এদেশের কোথাও কোনোরকম সংরক্ষননীতি মানা হয় না। National Sample Survey Organization (NSSO) এর সমীক্ষা অনুযায়ী – ভারতে মোট শ্রমিকের 94% কাজ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রে এবং বাকি 6% কাজ করে সংগঠিত ক্ষেত্রে। তবে সরকারি ক্ষেত্রে কাজ করা 4.63% কর্মচারী কিন্তু ঐ সংগঠিত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত।
#ইদানিং বহু সরকারি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরন হওয়ায় সংরক্ষিত পদের সংখ্যা দ্রুতহারে কমেছে। আবার সংরক্ষণনীতি না মেনে সরকার বহু চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ করায় SC/ST কর্মচারীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। আবার চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্তদের চাকুরি পরবর্তীতে স্থায়ী করায় মাঝখানে পড়ে মার খাচ্ছে SC/ST ছাত্রছাত্রীরা। নিয়োগে গাফিলতিতো আছেই, সেই সঙ্গে যোগ্যলোক পাওয়া যাচ্ছেনা বলে উদ্ভট কারন দেখিয়ে সরকারি দপ্তরে এখনো হাজার হাজার সংরক্ষিত পদ খালি রাখা হচ্ছে।
2019 সালের নভেম্বর মাসে কেন্দ্র সরকার দ্বারা ভারতীয় সংসদে প্রদত্ত তথ্যের কয়েকটি নমুনা নিচে দেওয়া হোলো –
কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের 89টি দপ্তরে সচিব রয়েছেন SC-1জন (প্রাপ্য 13জন), ST-3জন (প্রাপ্য 7জন), তবে এতে কোনও OBC প্রতিনিধি নেই (প্রাপ্য 24 জন).
আবার কেন্দ্রীয় সরকারের সচিবালয়ে কর্মরত 275 জন যুগ্মসচিবের মধ্যে রয়েছে
SC-13 জন (প্রাপ্য 41জন)
ST-9 জন (প্রাপ্য 21জন)
OBC-19 জন (প্রাপ্য 74 জন)
রুরকি আই, আই,টিতে 433 জন অধ্যাপকের মধ্যে SC মাত্র 8 জন এবং ST মাত্র 2 জন। কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বত্র সংরক্ষিত পদ খালি থাকা সত্বেও তারা হিসাব দেখান SC/ST কর্মচারির কোনো ঘাটতি নেই, এটা #পৃথিবীরঅষ্টমআশ্চর্য।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই সংরক্ষিত পদে কর্মচারীর কোনো ঘাটতি নেই, তাহলে দেশের সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের মোট কর্মচারীদের মধ্যে #সংরক্ষণের মাধ্যমে SC/STরা চাকরি করেন মাত্র 1.04%, সুতরাং কোনো দেশের 1.04% কর্মচারীর কর্মদক্ষতা যদি সাধারনের থেকে একটু কমও হয়, তার জন্য সেই দেশ কখনো রসাতলে যায়না। আর সেই দেশ যদি সত্যিই রসাতলে যায়, তার জন্য দায়ী অসংরক্ষিত পদের ঐ 99% (প্রায়) কর্মচারী।
#প্রকৃতপক্ষে সংরক্ষিত পদে কাজ করা কর্মচারীর সংখ্যা 1.04% এর থেকেও কম। কারন চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ ও অস্থায়ী পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি মানা হয়না। তাহলে বুঝতেই পারছেন কত শতাংশ ছাত্র ছাত্রী সংরক্ষণের সুযোগ নিয়ে চাকুরি পায়, তবু জাতিবিদ্বেষীরা চিরকাল রব তূলে এসেছেন -দেশের সব চাকুরি যেন ঐ SC/STরা নিয়ে গেলো। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই – বাবাসাহেব আম্বেদকর সরকারি ক্ষেত্রে SC/STজন্য ঐ সংরক্ষণ দিয়ে না গেলে আজ তাদের কপালে এটুকুও জুটতো না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অর্থনীতিবীদ অশ্বিনী দেশপান্ডে (দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত) এবং অর্থনীতিবীদ থমাস ই উইস্কপ্ (মিচিগান বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা) একটি সমীক্ষায় (The Affirmative action of Productivity in Indian Railway) দেখিয়েছেন SC/ST কর্মচারীরা কর্মদক্ষতায় অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে। #সুতরাং দেশ যদি #রসাতলে যায় তার জন্য দায়ী অসংরক্ষিত পদে চাকুরি করা তথাকথিত উচ্চবর্নের কর্মচারীরা। সুতরাং SC/STদের কর্মদক্ষতার নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার কোনও কারন নেই।
দাঁড়ান এতক্ষণ আপনারা শুধু ট্রেলার দেখলেন, #পিকচার আভি বাকি হ্যায়। উচ্চবর্ণের যেসকল জাতিবিদ্বেষীরা বলেন – আমরা 80% নম্বর পেয়ে চাকুরি পাইনা, আর ওরা 30%- 40% নম্বর পেয়ে চাকুরি পেয়ে যাচ্ছে, তাদের মিথ্যে প্রচার ভোঁতা করতে নিচে কিছু তথ্য-
ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও কঠিন চাকুরির পরীক্ষা Civil Service Exam (IAS) 2018 এর ফাইনাল রেজাল্ট কয়েক মাস আগে বেরিয়েছে।
2025 নম্বরের এই পরীক্ষায় (লিখিত 1750 নম্বর + পার্সোনালিটি টেষ্ট 275 নম্বর) Cut off Marks ছিল এরকম –
General- 982 (48.49%)
OBC – –938 (46.32%)
SC & ST- 912 (45%)
এটাকে শুধুমাত্র একটা পরিসংখ্যান ভাবলে ভুল হবে, এটা যুগযুগ ধরে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত হয়ে আসা সমাজের প্রতিভূদের হাতে জাতিবিদ্বেষীর মুখে একটা সপাটে থাপ্পড়। আজ তফাৎ ঘুচিয়ে ওদের ঘাড়ের ওপরে নিশ্বাস ফেলছে দলিত সমাজের এই যোদ্ধারা। এরপরও যদি কেউ মিথ্যা অপবাদ তথা আজগুবি কথা বলে SC/ST দের অবমূল্যায়ন করতে আসে, মুখের পরে ঠুসে দেবেন এই তথ্যগুলো।
ছলেবলে, কলেকৌশলে SC/STদের দাবিয়ে রাখার কতই না চেষ্টা ওরা করে চলেছে। এইতো ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্বেও দিল্লির সফদরজং মেডিকেল কলেজে 2004-2010 সাল পর্যন্ত SC/STর 25 জন MBBS ছাত্রকে টানা 6 বছর ফেল করানো হয়। পরবর্তীতে দিল্লি হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে অন্য একটি নিরপেক্ষ জায়গায় তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় এবং তারা এক চান্সেই সকলে পাশ করে যায়। এটাকে কি বলবেন আপনারা ?
মেডিকেলের উচ্চশিক্ষায় (MD/MS কোর্স) প্রাইভেট কলেজগুলোতে সংরক্ষণ আগেই তুলে দেওয়া হয়েছে। আবার মেডিকেলের সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষায় কয়েকটি বিষয়ে উচ্চবর্নের কিছু ছাত্র “শূন্য” পাওয়া সত্বেও বাপের টাকার জোরে ঐ সব প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হচ্ছে MBBS কোর্সে, অথচ ওদের থেকে নিট পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া SC/ST ছাত্রছাত্রীরা টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না ঐ কলেজগুলোতে। আমাদের এই সাম্যের দেশে ক্যাপিটেশন ফি নামক এরকম ছাকনিতে আটকে দিচ্ছে অগনিত SC/ST ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ। সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে -এদেশে যেন নিম্নবর্নে জন্মগ্রহণ করাটাই অপরাধ।
মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের মোট জনসংখ্যার মধ্যে উচ্চবর্ন-15%, OBC-52%, SC-15%, ST-7.5% এবং Muslim-10.5% হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র #উচ্চবর্নের মানুষ দখল করে আছে
রাজনীতির 66%,
চাকুরির 87%,
ব্যবসার 10% এবং
জমির 51%.
বিচার বিভাগের উচ্চস্তরের 90% এবং
সব ধরনের মিডিয়ার 100%,
(প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মন্দিরের #প্রনামীর হাজার হাজার কোটি টাকা এবং দেশের সম্পদ লুঠ করে বিদেশে পালানোয় #উচ্চবর্নের 100% সংরক্ষণ)
অথচ SC/ST দের কপালে জুটেছে
রাজনীতি 22.5%,(সংবিধানের দৌলতে)
চাকুরি 5%, (বাস্তবে 2%)
ব্যাবসা 0.2%,
এবং জমি 1%.
যুগযুগ ধরে সমাজে এই পিছিয়ে রাখা SC/ST মানুষগুলোকে বঞ্চিত করে জাতিবাদিরা (উচ্চবর্ণেরা) সর্বস্ব ভোগ করে চলেছে। এতেও তাদের ক্ষান্তি নাই, তাদের যেন আরো চাই, সবটুকু চাই। সে জন্যই ঐ ওরা সংরক্ষণের ফলে SC/STদের পাওয়া সামান্য অধিকারটুকুও কেড়ে নিতে সদা উদ্যত।
#আজকাল আইনসভাকে এড়িয়ে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমেও ওরা একের পর এক SC/STদের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের পথে বসাতে চলেছে। কয়েক মাস আগে উচ্চবর্নের দরিদ্রদের জন্য শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে 10% সংরক্ষণ তারা আইনসিদ্ধ করেছে। মাসে 66,666 টাকা আয় করা জাতিবাদিরাও আজ গরীবের স্বীকৃতি পাচ্ছে। তাতেও ওদের খাই মেটেনি, তার জন্য সোস্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে SC/STদের সংরক্ষণ নিয়ে চলছে মিথ্য প্রচার। জাতিবাদিদের এই অপপ্রচার রুখতে যুক্তিপূর্ণ তথ্যযুক্ত হাতিয়ার নিয়ে SC/STদের অগ্রসর হওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।
-জয়ভীম।।
( বিঃদ্রঃ- দলিতস্বার্থে লেখাটি দিকে দিকে ছড়িয়ে দিন)
[তথ্য সংগ্রহে- তাপসকান্তি বিশ্বাস]